IQNA

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না: শেখ হাসিনা

17:49 - September 12, 2017
সংবাদ: 2603811
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে 'মানবতাবিরোধী ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন' আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বার্তা সংস্থা ইকনা: আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে সংক্ষিপ্ত জনসভায় রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আপনাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা আপনাদের পাশে থাকব। আপনারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি। ঘরবাড়ি হারিয়ে যেসব রোহিঙ্গা এখানে (বাংলাদেশে) এসেছেন, তাঁরা সাময়িক আশ্রয় পাবেন। তবে, তাঁদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ’প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের যা করার দরকার, আমরা সেটি করব। আমরা শান্তি চাই।’

সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বেলা সাড়ে ১১টায় পৌঁছান উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গাশিবিরে। এ সময় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নেন এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।  এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গুলিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নাফ নদীতে নারী-শিশুর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। এই বর্বর হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। মানবিক দিক বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উপায় না দেখে এ দেশের মানুষ তখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রমুখ।

এরপর কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ করে প্রধানমন্ত্রী বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসেন।

এর আগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে রোহিঙ্গা-বিষয়ক সাধারণ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আসা সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। ওই দেশে নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। কারণ, রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার। তাদেরই এর সমাধান করতে হবে। প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।

একইসঙ্গে, রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা বা আর্থিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা না করেন, সেই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের খাবার দিই। সেই সঙ্গে কয়েক লাখ মানুষকে খাবার দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করেছে, সে দৃশ্য ভেসে উঠছে। আমাদের জন্য কঠিন এত মানুষ রাখা, আশ্রয় দেওয়া। তারা মানুষ, তাদের ফেলে দিতে পারি না। আমরাও তো রিফিউজি ছিলাম। রিফিউজি থাকার যন্ত্রণা কী, তা আমরা বুঝি।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে যেন মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করার মানসিকতা দেখতে পাচ্ছি। সমস্ত মুসলিম উম্মাহ যদি অনুভব করতে পারত, ঐক্যবদ্ধ থাকত, তাহলে কেউ মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করতে পারত না।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ করতে ও তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের প্রস্তাব পাস করেছে জাতীয় সংসদ। পার্সটুডে
captcha