বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: এছাড়া বাংলাদেশ ও ইতালি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করতে একমত হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার ইতালিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিওসিপে কোঁতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে অংশ নিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গেলে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বৈঠক শেষে ৯ দফা যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়।
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন পালাজো চিগিতে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। দুই সরকার প্রধানের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্ব পায়।
তিনি বলেন, প্রায় ১ ঘণ্টার বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং দু’দেশের মধ্যকার বর্তমান আর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, উভয়পক্ষই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ২৩ জানুয়ারির আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করেছেন। বৈঠকে জিউসেপ কোঁতে ইতালির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে ১০ লাখ ইউরো সহায়তা দেয়ার ঘোষণাও দেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় বাংলাদেশের অনুসৃত আতিথেয়তার নীতি অব্যাহত রাখতে এ জরুরি মানবিক অবস্থা মোকাবেলা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসাহ প্রদানে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ইতালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রীর ৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘উভয়পক্ষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের মধ্যে উন্নয়ন, শ্রম ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আরও নিবিড় সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।’ দুই নেতা ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক নীতির আওতায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানির গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিনিময়ের ইতিবাচক উন্নয়নের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়- বিগত কয়েক বছরে সার্বিক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রায় ২ বিলিয়ন ইউরোরও বেশি। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা স্বীকার করে বিবৃতিতে তারা বলেছেন, গত কয়েক বছরে সার্বিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়ে ২ বিলিয়ন ইউরোর উপরে দাঁড়িয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কথা স্বীকার করেন, যার লক্ষ্য ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের করে আনা।
এতে বলা হয়েছে, উভয় নেতাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ইতালি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, ওষুধ শিল্প, হালকা প্রকৌশল, চামড়া, হাইটেক এবং প্রচলিত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উভয় খাতে সমৃদ্ধকরণে নিজস্ব আস্থা ব্যক্ত করেন। নীল অর্থনীতির ক্ষেত্রটিকেও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, একই সঙ্গে ইতালির আউটরিচ কার্যক্রম ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সঙ্গে সম্পর্কিত।
কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চিত্র কোঁতের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য ইতালিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা সুবিধা চালু করার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সেখানে ইতালির ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় নেতাই ইতালিতে ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি বৃহৎ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অবস্থানের কথা স্মরণ করেন, যাদের বেশিরভাগই ইতালীয় সামাজিক কাঠামোয় সুসংহত। আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভিবাসনের ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করার দিকে নিবদ্ধ ছিল। দুই প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত অভিবাসন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্ভাব্য আইনি পথের বিষয়ে কথা বলেছেন।
দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনেরও উল্লেখ করেন (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২৬ মার্চ ২০২১ সাল)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উদযাপনকালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিওসিপে কোঁতেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
পোপের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ভ্যাটিকান সিটিতে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সকালে ইতালির রাজধানী রোমের কাছে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি যান এবং পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন এবং পোপের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকালে ট্রেনে ইতালির মিলান নগরীর উদ্দেশে রওনা দেবেন।
সূত্র:jugantor