IQNA

ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারে মুসলমানদের অবদান

0:09 - January 21, 2024
সংবাদ: 3474977
ইকনা: কলম জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের অন্যতম মাধ্যম। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে প্রাচীন মিসরীয়রা প্রথম কলমের ব্যবহার শুরু করে। কারো কারো মতে, প্রায় চার হাজার বছর আগে গ্রিকরাও কলমের মাধ্যমে লেখালেখি করত। তাদের তৈরি কলমগুলো ছিল হাতির দাত বা এজাতীয় কোনো জিনিস দ্বারা।

ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারে মুসলমানদের অবদানকলম যে জ্ঞান প্রসারের অন্যতম উপকরণ সে কথা পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ আছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।’
(সুরা : আলাক, আয়াত : ৪)

পবিত্র কোরআনে ‘কলম’ নামে আলাদা সুরা আছে। সে সুরার প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নুন—শপথ কলমের আর লেখকরা (ফিরিশতারা) যা লেখে তার শপথ।

’ (সুরা : কলম, আয়াত : ১) 
মহান আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টিকুলের তাকদির কলমের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কলম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কলম সৃষ্টি করে তাঁকে লেখার আদেশ করেন। কলম বলল, কী লিখব? তখন আল্লাহ বলেন, যা হয়েছে এবং যা হবে তা সবই লিখ। কলম আদেশ অনুযায়ী অনন্তকাল পর্যন্ত সম্ভাব্য সব ঘটনা ও অবস্থা লিখে দিল।

(মুসনাদে আহমাদ : ৫/৩১৭)
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, কলমের উৎপত্তি পৃথিবীসহ গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টির অনেক আগেই হয়েছিল।

মহান আল্লাহ পৃথিবীর মানুষকেও কলমের ব্যবহারের শিক্ষা দিয়েছেন বহু আগে। আদিম যুগে পাহাড়ের গুহায় আঁঁকাআঁকি করে মানুষ বিভিন্ন জরুরি বিষয় সংরক্ষণ করত। এরপর একসময় লেখালেখি করা হতো বিভিন্ন গাছের পাতা, বাকল ও পশুর চামড়ার ওপর। কলম হিসেবে তারা ব্যবহার করত নলখাগড়া, শর বা বেণু, বাঁশের কঞ্চি অথবা ফাঁপা খণ্ড।

এসব খণ্ড কলমের মতো করে কেটে সুচালো করা হতো। সুচালো অংশটি কালির মধ্যে চুবিয়ে লেখা হতো। কালিও ছিল বিভিন্ন গাছের রস এবং বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা প্রস্তুত।
নলখাগড়াজাতীয় কলমের ব্যবহার চলে বহুকাল। দীর্ঘকাল পর প্রায় পাঁচ শতকের দিকে এসে কঞ্চি বা নলখাগড়ার জায়গা দখল করে পাখির পালক। রাজহাঁসের পালক ছিল সে যুগের কলম তৈরির প্রধান উপকরণ। পালকের মাথা সূক্ষ্মভাবে সুচালো করা হতো, যাতে লিখতে সুবিধা হয়।

তবে এভাবে লিখতে গিয়েও কখনো কখনো মানুষের জামা-কাপড়ে কালি লেগে যেত। তাই এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে মুসলিমদের হাতে আবিষ্কৃত হয় ফাউন্টেন পেন।

ফাউন্টেন পেন এমন এক বিশেষ ধরনের কলম, যাতে তরল কালি বিশেষ প্রকোষ্ঠে সঞ্চিত থাকে। বিশেষ প্রকোষ্ঠটির সঙ্গে একটি সরু পথ দিয়ে কলমের নিবটি যুক্ত থাকে এবং মধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে ওই পথ ধরে আসা কালি দিয়ে লেখা সম্ভব হয়। বিশেষ প্রকোষ্ঠটিতে সিরিঞ্জের মাধ্যমে বাইরে থেকে কালি ভরা যায়। এ ছাড়া কলমের অভ্যন্তরীণ চোষণ কৌশলের মাধ্যমে বোতল থেকে কালি চুষে নেওয়া যায়। এ ছাড়া কালিভর্তি প্রকোষ্ঠ আলাদাভাবে বিক্রি করা হয়। ঝরনা কলম দিয়ে লিখতে তেমন কোনো চাপ প্রয়োগ করা লাগে না, খুব সহজে আলতো চাপে এতে লেখা সম্ভব হয়।

বিশ্বের প্রথম ফাউন্টেন পেন আবিষ্কৃত হয় ৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে, মিসরে। মিসরের সম্রাট মাদ আল-মুয়িজ এমন একটি কলমের কথা চিন্তা করলেন, যা হাত ও কাপড় কালিতে নষ্ট করবে না। আবিষ্কৃত এই কলমে আধুনিক কলমের মতো কালি জমা থাকত এবং মধ্যাকর্ষণ বলের সাহায্যে সূক্ষ্ম নল চুয়ে কালি বের হতো। কাদি আল-নুমান আল তামিমি (৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং কিতাব লিস ওয়া ই-মুসাইয়ার্দতে এর বিশদ বর্ণনা রয়েছে।

যুগের পরিবর্তনে আরো অনেক কলম আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু ফাউন্টেন পেনের রাজকীয় ভাব ও আবেদন আজও অক্ষুণ্ন আছে।

captcha