বার্তা সংস্থা ইকনা: সাংবাদিকদের ওই বিচার প্রক্রিয়াকে এরদোয়ান সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে তারা। অন্যায়ভাবে বিচারের মুখোমুখি করা সকল তুর্কি সাংবাদিক ও জুমহুরিয়েত পত্রিকা ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় নিয়োজিত অমুনাফাভিত্তিক ওই সংগঠন।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে তুরস্কে ‘ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা’র পর থেকেই বিশ্লেষকদের আশঙ্কা ছিল,ওই ঘটনাকে ব্যবহার করে ক্ষমতাকে আরও সংহত ও নিরঙ্কুশ করার চেষ্টা করবেন তুরস্কের সরকারি দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির শীর্ষ নেতা প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোয়ান। বিশ্লেষকদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে এরদোয়ান সরকারবিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন শুরু করেন।
গত মার্চে ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় মদদের অভিযোগ তুলে ২৫ তুর্কি সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়ার ধারাবাহিকতায় বুধবার ইস্তাম্বুলভিত্তিক আদালতে ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘জুমহুরিয়েত’ এর ১৪ জন সংবাদকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। আপিল আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্তদের মুক্ত অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হলেও তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
বৃহস্পতিবার আরএসএফ-এর তুর্কি প্রতিনিধি এরো ওনারদেরোর এক বিবৃতিতে এ সাজা ঘোষণার দিনটিকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে আরেকটি অন্ধকার দিন আখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘ওই সাংবাদিকদের ৮ বছর ৬ সপ্তাহ মেয়াদ পর্যন্ত সাজা ঘোষণার ঘটনা তুরস্কে সাংবাদিকতাকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করার সবশেষ উদাহরণ।’
আদালতে আহমেত সিককে সাড়ে সাত বছর, কলাম লেখক কাদরি গুরসেলকে আড়াই বছর, কার্টুনিস্ট মূসা কার্টকে তিন বছর ৯ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রধান সম্পাদক মুরাত সাবুনচুকে দেওয়া হয়েছে সাড়ে সাত বছরের কারাদণ্ড। পত্রিকাটির চেয়ারম্যান আকিন আতালয় দণ্ডিত হয়েছেন সাত বছরের কারাদণ্ডে। এরইমধ্যে ৫০০ দিন জেলে কাটিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয়-নিয়ন্ত্রণের প্রাবল্যের মধ্যেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে জুমহুরিয়েতের ওপর সরকারের নাখোশ হওয়ার নেপথ্য কারণ বলা হয়েছে। আরএসএফ-এর তুর্কি প্রতিনিধি ওনারদেরো বলেন, ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ বিচার প্রক্রিয়া যেমন করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল; সাজা ঘোষণাও সেই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ারই অংশ।’
ওনারদেরো আরও অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিশোধের তৃষ্ণা নিবারণের স্বার্থে তুর্কি সরকার সাংবাদিকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে চায়, তুরস্কের সর্বশেষ সরকারবিরোধী সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চায়। তিনি বলেন, ‘জুমহুরিয়েত এবং অন্যায়ভাবে বিচারের মুখোমুখি করা তুর্কি সাংবাদিকরা ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের সমর্থন দিয়ে যাব।’ এমটি নিউজ